সাম্প্রতিক কবিতাসমূহ

শিক্ষা সফর ২

শিক্ষা সফর ২

       -রিপন চন্দ্র বর্মন


এক প্রকার হঠাৎ করেই যাত্রা হল ঠিক
সিলেট যাব আবার মোরা হবে না বেঠিক।
কৃষ্ণ, মামুন দুই জনে উদ্যোগটা যে নেয়
খুব শিগ্রই যাব মোরা জানায়ে যে দেয়।
সিলেটের ঐ মাধবকুন্ডে ঝরনা দেখব গিয়ে,
প্রাণ জুড়াবো প্রকৃতির ই অমৃত সুধা পিয়ে।
রায়হান স্যার পরার মাঝে বুঝায়ে বলে
আটশ টাকা হলে ই ট্যুর সুন্দর মত চলে।
সারের কথায় সবাই মোরা হয়ে গেলাম রাজি
মজা করব, উল্লাস করব রাখতেই পারি বাজি।
প্রথম দিনেই সাইফুল দেয় পাচ জনের টাকা,
টাকা দিয়ে বুঝি তার পকেট হল ফাকা।

চার তারিখ শুক্রবার ঠিক সকাল বেলা
বাসে থাকি সবাই যেন না করি যে হেলা।
সকাল বেলা আমি শাকিল, মিলে দুই জনে
রিক্সা করে পৌছে গেলাম আনন্দিত মনে।।
যথা সময়ে বাস ছাড়ল যাত্রা হল শুরু
কি জানি কি হয় ভগবান মন কাপে দূর দুরু।
ছেলে মেয়ে আলাদা ভাবে বসল সবার সিটে
মনটা আমার নেচে উঠে মৃদুমৃদু বিটে।
এরই মাঝে রায়হান স্যার শুরু করলেন কথা
মোদের সাথে অথিতী আছে পেয়োনা মনে ব্যথা।
সুন্দর মনের মানুষ তিনি, করেন প্রচুর মজা
দেখতে একটু বয়স হলেও মনটা তরুন তাজা।
দেখতে দেখতে এরই মধ্যে ছেরে দিল বাস
সাউন্ডের তালে তালে শুরু করল নাচ।
নাচের জন্য সুভাস দার জুড়ি মেলা ভার,
জানতাম না, এত সুন্দর নাচে রায়হান স্যার।
প্রথম স্যার ডাকলেন, যেন নাচে মারিয়া,
প্রিতম তো নাচে যেন সারা বাস ঘুরিয়া।
এরই মধ্যে সকলেই প্রায় নাচতে শুরু করে,
ব্রেক কষলে বাসের সবাই হুরমুরিয়ে পরে।
সুকান্ত বাউল প্রথম থেকেই নাচে হেলেদুলে,
রাকেশ পাল তো বসেই রইল নাচল না তো ভূলে।
মিস্টি মেয়ে তিন্নি নাচে সিটে হেলান দিয়ে
জি বাংলায় হতে পারত সেরা নাচিয়ে।
সবার সাথে আমিও নাচলাম অল্প বিস্তর
নাচতে নাচতে পেটের ভিতর খিধা লেগেছে দুস্তর।
অজানা এক হোটেলের নিকট বাস করাল দ্বার
নাস্তা এবার খেতেই হবে পারি না যে আর।
একটা রুটি, একটা কলা সাথে সিদ্ধ ডিম
ঋতু নাকি ডিম সিঝাইতে খেয়েছে হিমসিম।
বাস থেকে নেমে গিয়ে খাওয়া করলাম শেষ
খাওয়ার পর মনটা তাজা লাগছে যে বেশ।।

যাত্রা আবার শুরু করলাম, জলদি যেতে হবে
মাধব কুন্ডের ঝরনা দেখে শান্ত হব তবে।
রায়হান স্যার সবারে এবার, বলে যে ডাকি
যাকে ডাকি গান গাইবা দিবা নাতো ফাকি।
মারিয়া যে নাচে ভাল, গানেও চমৎকার
ছোট্ট মেয়ে ইভার গানে সুরের তিক্ষ্ণধার।
এই পথ যদি না শেষ হয় গানটি গাইল ঝুমা
মামুন গাইল এসো এসো ওগো প্রিয়তমা।
একে একে সবাই গাইলো ফাটাফাটি গান
দ্বীন ইসলাম দিনুর গানে জুড়ালো যে প্রান।
প্রনয়, রাকিব দুই জনে দেশের গান গায়
মাকে নিয়ে রুবেলের গানটি প্রান জুরিয়ে যায়।
আমিও একটি পুথি পাঠ করি সবার মাঝে
লটারির একটা টিকিট পাইছি অনন্য এই কাজে।
একই সাথে বহু গান গাইল জুয়েল রানা
ছোট্ট একটু কলিই শুধু গাইলো ফারজানা।
প্রদিপ তো সামনে গিয়ে কস্টের গান তোলে
দু চোখ তার ভরে উঠে অচিন ব্যথার জলে।।

আগেই স্যার বলেছিলো জরিমানার কথা
গান না গাইলে ১০০ টাকা দিতে হবে যথা।
গানের ক্ষেত্রে এবার যখন এল বিথীর পালা
গান গাইতে পারবেনা সে মুখ করল কালা।
১০০ টাকা তখনি দেয়, সুভাস দাদার কাছে
টাকা পেয়ে দাদা তো তাধিং তাধিং নাচে।
কিন্তু হঠাৎ এই মেয়েটি করলো একি কান্ড
রোমান্টিক গান গেয়ে দাদার, নাচ করল পন্ড।
নাচে গানে বাসটি মোদের চলল বহু দূর
মাধব কুন্ডে এলাম বলে, ঐতো রাঙা ভোর।।

পথের পাশে সুন্দর একটা দেখে চায়ের বাগান
ড্রাইভার তো বাস থামালো, দিতে মজার যোগান।
বাস থেকে নেমে সবাই, বাগানের দিকে হাটি
সবুজ ঘাসে মাটি ঢাকা, যেন সবুজের ই পাটি।
জোড়ায় জোড়ায় একা একা হয়তো সদলবলে
ছবি তুলল চা পাহার আর অল্প কিছু জলে।।
হঠাৎ করেই শুনি কানে অন্য শোরগোল
মারিয়াকে জোকে ধরছে, চোখে সর্ষে ফুল।
তারাতারি সারা শরির করে নিলাম চেক
দেখতো দোস্ত, জোক কোথায়, তারাতারি দেখ।
কৃষ্ণকে ও নাকি একটা জোকে কামর দিয়েছিলো
জোকের কি দোষ বল, তাকে ভালবেসেছিলো।

চায়ের বাগান দেখে মোরা ফের উঠলাম বাসে
রায়হান স্যার মাইক্রোফোনে একটু খানি কাশে।
বলল এবার সবাই শোন, আরো হবে গান
এই বাসের কারু মোখই,থাকে না যেন ম্লান।
পান্না যে এতো নাচে জানতাম না তো আগে
তার নাচে সবাই যেন, ঘুম থেকে জাগে।
ধারনা তো ছিলনা কভু কেমন ভালো নাচে
বিধাতা তাকে বানিয়েছে যেন নিপুন হাতের ছাচে।
নাচ আনন্দ হাসি গানে সেথায় পৌছে গেলাম
খিদায় পেটে আগুন জ্বলছে, বুঝতে যে পেলাম।
একটি করে খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে দেয় হাতে
ডিম, সবজি, মাংস, ডাউল ভরা ছিলো তাতে।

খেয়ে দেয়ে বেশ পালটিয়ে ফের করালাম যাত্রা
ঝরনাটাযে একটু সামনে ই, মনে খুশির মাত্রা।
হেটে হেটে সবাই মোরা, যাই ঝরনার নিকট
দূর থেকেই শুনছি মোরা গর্জন হচ্ছে বিকট।
ঝরনার জলে সবাই মিলে, করে নিলাম স্নান
প্রকৃতি মায়ের সূধা যত, সব করলাম পান।
সবাই অনেক তুলল ফটো দারিয়ে হাটু জলে
ঝুমা রইল ডাঙায় বসে হাত দিয়ে গালে।
পবিত্র জলে স্নান করে, শুদ্ধ হল কায়া
আসবে না তো মনে আর, অপবিত্রের ছায়া।
বিশাল ঝরনা দেখে মোর মনটা ও বিশাল হল
এবার মোদের ফিরতে হবে তারাতারি চলো।
পায়ে হেটে আবার মোরা, চললাম বাসের দিকে
আনন্দ টুকো মন থেকে, কভূ হবে না ফিকে।
ঝরনা দেখে, স্নানের শেষে আবার চলল গাড়ি
নেচে গেয়ে ফুল মাস্তিতে চলেই যাব বাড়ি।

সাউন্ড বক্সের গানের তালে তালে মনটা দুলে ফের
নাচতে নাচতে চলে এলাম মাঝে সকলের।
পদ্ম রানির নাচ দেখে চোখটা ছনাবড়া
নাচ দেখবি পিছনে কেন, সামনে আয় ত্বরা।
প্রিতম তো একাই একশ, নেচে বাজিমাত
কে কে যেন নেচেছিল হাতে রেখে হাত?
রিতা আচার্যি মেডাম তো একে বারে ই অলস,
নাচলো না তো মোটেই যেন, জল শূন্য কলস।
নাচতে নাচতে এলাম যখন শ্রীমংগল রোডে
রায়হান স্যার তো নেমে গিয়ে আপেল নিয়ে উঠে।
সবাইকে একটা একটা আপেল দেয় বেটে
কে পেয়েছে কে পায়নি কৃষ্ণ দেখছে হেটে।
খাওয়া শেষে এবার হলো লটারির পালা
এটা কেন করতে গেল বাড়ল একটা জ্বালা।
এমন সুন্দর পুরস্কার দিছে বলতে হয় কষ্ট
প্রথম খাটাস আমি হইছি মনে আছে স্পষ্ট।
রুবেল পাইছে প্রথম পুরস্কার এক জোড়া জুতা
জুতা দিয়েই কথায় স্যার মারছে কিছু গুতা।

লটারিরর পর্ব শেষ করে কি আর বসে থাকা যায়?
গানের তালে তালে মনটা আবার নাচতে চায়।
শেষ নাচন নাচরে মন নাচরে উড়াধুরা,
তিন্নির নাচ দেখলেরে ভাই, পাগল হইবে বুড়া।
লোকনাথ, কৃষ্ণ, মামুন, রাকেশ বাদ পড়েনি কেউ
নেচে নেচে মাতাল তারা, আনন্দেরই ঢেউ।
লিয়নের কথা বলব কি, কোমর দুলিয়ে নাচে
মুক্তা ও তো নাচার জন্য, উড়না খানি কাছে।
সুভাস দার তো জুড়ি নেই, রায়হান স্যার ও বেশ
সবার মাঝে এ ছড়িয়ে পরলো আনন্দের ই রেশ।
পিছন দিকে ইভা নাচে আরো নাচে রুমা,
মাঝের দিকে হেলে দুলে নাচছে দেখ ঝুমা।
কাপল ডান্সে একাই প্রিতম নাচে দুইয়ের সাথে
পদ্ম রানির নাচ দেখে হাত রাখলাম মাথে।
ইফুকে আমি কভু নাচতে নাহি দেখি
ফারজানা ইসলাম মিতু নাচে কান্ড ওমা একি।
সফর শেষ করলাম যখন বিষণ্ণতা দিয়ে আড়ি,
রাত তখন অনেক হলো কেমনে যাব বাড়ি?
ঠিক করল রায়হান স্যার করে সুবিচার
সারের বাসায় মেয়েরা যাবে চিন্তা রয় না আর।
এই সফরের কথা কিছু মনে গেথে রবে
হাজার বছর পরেও ভাই কানে কানে যে কবে।
না গিয়েছে তারা এখন কর আফসোস
"আগে কেনো হয় নি মোদের সুবুদ্ধির বুঝ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন